নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়া (Epistaxis)
নাক আমাদের শরীরের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এই নাক একই সঙ্গে আমাদেরকে ঘ্রাণ এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সহায়তা করে। এই নাক এতটাই সেনসেটিভ যে অল্প আঘাতে নাক থেকে রক্ত পড়তে থাকে। তাই নাক সবসময় রক্ষা করে চলতে হয়।
নাকের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সাধারণ অবস্থার মধ্যে একটি হলো নাক থেকে রক্তপাত (এপিট্যাক্সিস)। বিভিন্ন কারণে নাক দিয়ে রক্ত বের হতে পারে। তবে কারণ নির্ণয়ের পূর্বে জরুরী ভাবে রক্ত পড়া বন্ধ করা প্রয়োজন। পরবর্তীতে কারণ খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিতসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
নাক থেকে রক্তপাতের প্রধান কারণ হলো কিসেলবাখ প্লেক্সাসে আঘাত পাওয়া। এটি হলো নাকের নরম অংশের বা সেপ্টামের নীচের সামনের অংশে একটি ভাস্কুলার প্লেক্সাস যা চারটি ধমনীর অ্যানাসটোমোসিসের সাথে জড়িত। নাক থেকে রক্তপাতের আরেকটি কারণ হলো উড্রফের প্লেক্সাসে আঘাত। উড্রফের প্লেক্সাস হলো নাকের নরম অংশের বা সেপ্টামের নিচে মাংসের পিছনের অংশে পড়ে থাকা বড় পাতলা-প্রাচীরসহ একটি শিরাযুক্ত প্লেক্সাস। শিশুদের ক্ষেত্রে নাক হলো শরীরে বহিরাগত পদার্থ প্রবেশের একটি সাধারণ পথ। নাক উন্মুক্ত অঞ্চলগুলির একটি যা অতি ঠান্ডার জন্য খুবই সংবেদনশীল।
যে কারণে নাক দিয়ে রক্ত বের হয়ঃ
- নাকে আঘাত পেলে।
- অপারেশন হলে প্রচন্ড গরম বাষ্পে ঢুকলে।
- কোন বস্তু আটকে থাকলে।
- নাকের প্রদাহ ( ইনফেকশন) হলে।
- সাইনুসাইটিস হলে।
- নাকের টিবি হলে।
- বিভিন্ন টিউমার হলে।
- নাকের ভিতরে আবরনী কলা শুকিয়ে গেলে।
- হিমোফিলিয়া, রক্তের ক্যান্সার, লিভার রোগ, ভিটামিন-সি এর অভাব,
- উচ্চ রক্তচাপ হলে, ইত্যাদি।
প্রাথমিক চিকিৎসাঃ
- অল্প রক্ত বের হলে নাকের বাহিরের দিক দিয়ে দুই আঙ্গুল দিয়ে ২-৩ মিনিট চেপে ধরে সামঅনের দিকে ঝুঁকিয়ে রাখতে হবে। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি কার্যকরী।
- রক্ত বেশি পড়া শুরু হলে তাঁর নাকে চাপ দিয়ে সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে বসাতে হবে। তারপর বৃদ্ধাঙ্গুল ও প্রথম আঙুল দিয়ে নাকের দুই ছিদ্র জোরে বন্ধ করে দিতে হবে। তাকে বলতে হবে মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে এবং আনুমানিক ১০ মিনিট এভাবে ধরে রাখতে হবে। এ সময় কোন অবস্থাতেই আঙ্গুল ছাড়া যাবেনা, প্রয়োজনে হলে আরও বেশিক্ষণ চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হবে।
- নাকের উপরে, সম্ভব হলে ভিতরে এবং কপালের আশেপাশে বরফ দিলে রক্ত পড়া দ্রুত বন্ধ হয়ে যাবে।
- নাকে প্যাক দেয়া যেতে পারে (Nasal packing)। এ সময় মুখ দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হবে।
প্যাক দেওয়ার পদ্ধতিঃ রিবন গজ প্যাক হিসাবে ব্যবহার করা যায়। রিবন গজ ভাজ করে এড্রেনালিন ইঞ্জেকশন দিয়ে ভিজিয়ে নাকের সম্মুখ অংশ দিয়ে টাইট করে ঢুকিয়ে দিতে হবে। ২৪-৪৮ ঘন্টা পর প্যাকিং খুলতে হবে। রিবন গজ ভেসলিন বা নিওবেক্রিন মলম দিয়ে মেখে নিলে পরবর্তীতে খুলতে সুবিধা হয়।
রক্ত দেখলে একটু ভয় পায়না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আর সেটি যদি হয় নিজের নাক দিয়ে তাহলে তো কথাই নেই। সব বয়সের মানুষেরই নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। কারণ ৬০% মানুষ জীবনে কখনো না কখনো নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাই অস্থির না হয়ে ধৈর্য্য ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা উচিত। তারপরেও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে দ্রুত নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
[…] […]