মাসকুলার ডিসট্রফি কি?
মাসকুলার ডিসট্রফি একটি জেনেটিক বা বংশগত রোগ। এই রোগ হলে ডিসট্রফিন নামক প্রোটিনের অভাব দেখা যায়। যার ফলে মাংশপেশি গুলো স্বাভাবিক কার্যক্রম করতে পারেনা এবং দূর্বল হতে থাকে। তাই এই রোগের নাম করণ করা হয়েছে মাসকুলার ডিসট্রফি।
মাসকুলার ডিসট্রফি হলে হাঁটা চলা, খাদ্য গলাধঃকরণ, পেশি সমন্বয় সমৃদ্ধ কাজ এমনকি দৈনন্দিন কাজ করাও সম্ভব হয় না। এই মাসকুলার ডিসট্রফি সাধারণত মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের বেশি হয়ে থাকে। কারন মেয়েরা এই রোগের বাহক মাত্র। Duchenne Australia organization এর হিসাব মতে, সার বিশ্বে ৩৫০০-৫০০০ ছেলে শিশুর মধ্যে মাত্র ১ জনের এই সমস্যা হয়ে থাকে। এবং ৫০ মিলিয়ন মেয়ে শিশুর মধ্যে মাত্র ১ জনের হয়ে থাকে।
মাসকুলার ডিসট্রফির ধরণঃ
তিরিশের বেশি ধরণের মাসকুলার ডিস্ট্রফি রয়েছে। এদের মধ্যে নয়টির ধরণ খুব প্রকট আর বাকি গুলো দূর্লভ। মাসকুলার ডিসট্রফির ধরণ গুলোর মধ্য সবচেয়ে কমন ধরণ হচ্ছে, ডুশেন মাসকুলার ডিসট্রফি (Duchenne MD) । এছাড়াও রয়েছে-
- মায়োটনিক মাসকুলার ডিসট্রফি (Myotonic MD)
- বেকার মাসকুলার ডিসট্রফি (Becker MD)
- ফেসিও স্কাপুলো হিউমেরাল মাসকুলার ডিসট্রফি (Facioscapulohumeral MD)
- লিম্ব গার্ডল মাসকুলার ডিসট্রফি (Limb girdle MD)
- ওকুলোফেরেঞ্জিয়াল মাসকুলার ডিসট্রফি (Oculopharyngeal MD)
- ডিস্টাল মাসকুলার ডিসট্রফি (Distal MD)
- ইমেরি ড্রাইফাজ মাসকুলার ডিসট্রফি (Emery dreifuss MD)
- কনজেনিটাল মাসকুলার ডিসট্রফি (Congenital MD)
মাসকুলার ডিসট্রফির লক্ষণঃ
রোগের লক্ষণ গুলো রোগের ধরণের উপর নির্ভর করে। তবে কমন একটা লক্ষণ হলো- আস্তে আস্তে মাংশপেশির দুর্বলতা বেড়ে যাবে। এছাড়াও
- বারবার পড়ে যাবে
- বাসা থেকে কিংবা শোয়া থেকে উঠে দাঁড়াতে কষ্ট হবে (Gower sign positive)
- দৌড়াতে কিংবা লাফালাফি করতে পারবে না
- অস্বাভাবিকভাবে হাঁটবে
- পায়ের আঙ্গুলের উপর ভর করে হাঁটবে
- পায়ের কাফ মাংসপেশি বড় হয়ে যাবে
- মাংসপেশিতে ব্যথা অনুভব হবে
- বাচ্চার বেড়ে উঠা হ্রাস পাবে
- হাঁড় চিকন ও ভঙ্গুর হবে
- খাদ্য গলাধঃকরণ, শ্বাস কষ্টে সমস্যা এবং হৃদপিন্ডে দূর্বলতা দেখা দিবে
- বুদ্ধিজনিত ও মানসিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিবে
যেসব বাচ্চা ডুশেন মাসকুলার ডিসট্রফিতে আক্রান্ত হয় তাদের কিশোর বয়সের আগে হুইল চেয়ারের প্রয়োজন পড়ে।
ডায়াগনোসিস
বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে মাসকুলার ডিসট্রফি ডায়াগনোসিস করা হয় যেমন-
- রোগীর লক্ষণ গুলো খেয়াল করে
- রোগীর পরিবার থেকে হিস্ট্রি নিয়ে যেমন- বংশের কারো মাসকুলার ডিসট্রফি হয়েছে কিনা অথবা রোগের বাহক কিনা।
- ভালো করে ফিজিক্যালি এক্সামিনিশন করে
- রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে যেমন- S. CPK
- ইএমজি
- ইকো
- মাসল বায়োপসি
- পিসিআর ইত্যাদি টেস্ট করে মাসকুলার ডিসট্রফি ডায়াগনোসিস করা সম্ভব।
চিকিৎসা ও পরামর্শঃ
মাসকুলার ডিসট্রফি রোগের এমন কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই যার ফলে রোগী সম্পন্ন সুস্থ হয়ে উঠবেন। তবে ওষধ, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে রোগের মাত্রা কিছুটা কমানো সম্ভব। রোগের লক্ষণ বুঝতে পারলে দ্রুত শিশু বিশেষ্ণের পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং রোগীকে কর্মক্ষম ও সুস্থ রাখতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন। এছাড়া খাদ্য গলাধঃকরনের সমস্যা দেখা দিলে স্পিচ থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হউন। হার্ট এবং ফুসফুসের সমস্যা দেখা দিলে যথাক্রমে কার্ডিওলজিস্ট এবং বক্ষব্যাধি বিশেষ্ণের পরামর্শ গ্রহণ করুন।