স্পাইন মানে মেরুদন্ড আর বাইফিডা মানে দুই ভাগে বিভক্ত ।
স্পাইনা বাইফিডা কি?
স্পাইনা বাইফিডা হচ্ছে স্পাইনাল কর্ড এবং মেরুদন্ডের অসম্পূর্ন গঠন। বাচ্চা মায়ের গর্ভে থাকা অবস্থায় মেরুদন্ডে ত্রুটি থাকার কারনে যে অসম্পূর্ন মেরুদন্ড বা স্পাইন গঠিত হয় তাকে স্পাইনা বাইফিডা বলে।
স্পাইনা বাইফিডা হচ্ছে নিউরাল টিউবের ত্রুটি যার ফলে স্পাইনাল কর্ড এবং মেরুদন্ডে সমস্যা হয়ে থাকে। এই নিউরাল টিউব বাচ্চার ব্রেইন এবং স্পাইনাল কর্ড গঠন করে থাকে। গর্ভাঅবস্থার শুরুর দিকে নিউরাল টিউবের গঠন শুরু হয় এবং গর্ভধারনের ৪ সপ্তাহ পরে তা শেষ হয়। এই নিউরাল টিউব ভালোভাবে গঠিত না হলে বাচ্চার স্পাইনা বাইফিডার মতন সমস্যা দেখা যায়।
কারণঃ
স্পাইনা বাইফিডার সঠিক কারন অজানা কিন্তু গর্ভাঅবস্থায় ফলিক এসিডের অভাবে এটি হতে পারে বলে ধারনা করা হয়। এছাড়াও জিনগত ও পারিপার্শ্বিক উভয় প্রভাবকে দায়ি করা হয়। তবে জিনগত কারণে স্পাইনা বাইফিডা হয়ে থাকে বলে বেশ কিছু প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রকারভেদঃ
সাধারণত স্পাইনা বাইফিডা ৩ প্রকারের হয়ে থাকে।
১। অকাল্টাঃ এই ধরনটা কম মারাত্বক এবং খুবই কমন। এক্সরে এবং সিটি-স্ক্যান করলে সাধারণত বুঝতে পারা যায়।
২। মেনিঙ্গোসেলিঃ এই ধরণটা একটু মারাত্বক এবং স্পাইনাল কর্ডের পাশ দিয়ে বের হয় এবং ফোলা থাকে।
৩। মায়লো মেনিঙ্গোসেলিঃ এই ধরণটা খুবই মারাত্বক। যদি স্পাইনাল কর্ড সম্পূর্ণ মিলিত না হয় তখন এই অবস্থার সৃষ্টি হয়।
লক্ষণঃ
- পায়ে দূর্বলতা বা পা সম্পূর্ণ প্যারালাইসিস হয়ে যেতে পারে
- প্রস্রাব পায়খানার অনুভূতিতে সমস্যা হয়
- পায়ের চামড়ার অনুভূতি বুঝতে পারবে না ফলে ঠান্ডা, গরমের তারতম্য বুঝতে পারবে না এবং এক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়
- কিছু স্পাইনা বাইফিডা বাচ্চার হাইড্রোসেফালাস (অনেক বড় মাথার শিশু ) হয়ে থাকে ফলে ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে।
ডায়াগনোসিস
সঠিক চিকিৎসা করলে বাচ্চার জন্মের পূর্বেই স্পাইনা বাইফিডা ডায়াগনোসিস করা সম্ভব। চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে ‘’পেরেন্টাল স্ক্রিনিং টেস্ট’’ করে গর্ভের বাচ্চার স্পাইনা বাইফিডা সহ জন্মগত অনেক রোগ নির্ণয় করা যায়। তবে এই টেস্টটা সব মায়েদের ক্ষেত্রে নিখুঁতভাবে ডায়াগনোসিস করা সম্ভব হয় না। তাই চিকিৎসক গর্ভবতী মায়েদের বিভিন্ন ধরণের রক্ত পরিক্ষা এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফি দিয়ে থাকেন। ১৮ থেকে ২২ সপ্তাহের গর্ভবতী মায়েদের আল্ট্রা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, গর্ভের বাচ্চার স্পাইনা বাইফিডা আছে কি নেই। জন্মের পরেও স্পাইনা বাইফিডা আছে কিনা তা জানা যায়। চিকিৎসক রোগীকে শারিরীকভাবে চেক করে এবং এক্সরের মাধ্যমে নিশ্চিত হতে পারেন।
পরামর্শ
বাচ্চার এমন সমস্যা দেখা দিলে সর্বপ্রথম একজন শিশু বিশেষজ্ঞ বা অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন। চিকিৎসক রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে রোগীকে অপারেশনের জন্য প্রেরণ করতে পারেন। অপারেশনের পরে রোগী যেন স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে পারে, সে জন্য রোগীকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের কাছে প্রেরণ করবেন।
মনে রাখবেন, অভিভাবক হিসাবে আপনি হতাশ না হয়ে, সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করলে রোগী স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে সক্ষম হবে।