Dengue (ডেঙ্গু)

0
1558
চিকুনগুনিয়া Chikungunya
চিকুনগুনিয়া

 

ডেঙ্গু(dengue)
ডেঙ্গু একটি মশা বাহিত সংক্রমক রোগ। ডেঙ্গু বিশ্বব্যাপী গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপ-গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুতে লক্ষ্য করা যায়। ডেঙ্গু বেশিরভাগ সময় শহুরে এবং আধা-শহুরে এলাকায় দেখা যায় মাঝে মধ্যে ডেঙ্গু গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। স্ত্রী এডিস মশার কামড়ের ফলে ডেঙ্গু হয়ে থাকে। ডেঙ্গু সৃষ্টির জন্য দায়ী ভাইরাসটিকে বলা হয় ডেঙ্গু ভাইরাস।
ডেঙ্গুর চারটি ধরণ আছে। যদিও প্রায় সময় ডেঙ্গু হালকা অসুস্থতা তৈরি করে। তারপরেও কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু তীব্র ফ্লুর মতো অসুস্থতাও সৃষ্টি করতে পারে। মাঝে মাঝে ডেঙ্গু প্রাণঘাতী হয় উঠে, যাকে বলা হয় মারাত্মক ডেঙ্গু। ডেঙ্গু এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার কয়েকটি দেশে মারাত্মক অসুস্থতা এবং মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) যে দশটি রোগ হুমকি হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছেন তার মধ্যে ডেঙ্গু অন্যতম। বর্তমানে অনেক দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব এই পর্যবেক্ষণকে নিশ্চিত করে।
ডেঙ্গু মহামারীতে রূপ নিতে আবহাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্ষার সময় এবং পরে প্রায়ই বিস্তার ছড়িয়ে পড়ে। এই বৃদ্ধির পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে যেমন- এর মধ্যে রয়েছে মশার সংখ্যা উচ্চহারে বৃদ্ধি পাওয়া, সেরোটাইপগুলির সংবেদনশীলতা, মশার অনুকূল তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত এবং আর্দ্রতা। যা সবই মশার প্রজনন এবং খাওয়ার ধরনকে প্রভাবিত করে। সক্রিয় হস্তক্ষেপ ব্যতিত রোগ নিয়ন্ত্রন করা বড় চ্যালেঞ্জ।

 কারনঃ

ডেঙ্গু জ্বর বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে যেমন-

  • স্ত্রী এডিস্ মশা কামড়ের কারনে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে
  • ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশা কামড় দিলে এবং ঐ মশা যদি কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড় দেয় তা হলে ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে।
  • ডেঙ্গুর উপদ্রব বেশি এমন জায়গায় ভ্রমণ করলে ডেঙ্গু জ্বর হতে পারে।

লক্ষণঃ

যখন ডেঙ্গুর লক্ষণগুলি দেখা দেয় তখন, ডেঙ্গুর হালকা লক্ষণগুলি দেখা দেয় এবং তা অন্যান্য রোগের সাথে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। ডেঙ্গু সাধারণত সংক্রামিত মশা কামড়ানোর, ৪-১০ দিন পরে শুরু হয়। ডেঙ্গুর কারণে জ্বরের সৃষ্টি হয় যা প্রায় ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইড পর্যন্ত হয়ে থাকে। ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষন গুলো হলঃ

  • জ্বর
  • মাথাব্যথা
  • পেশী, হাড় বা অস্থিসন্ধি ব্যথা
  • বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া
  • চোখের পিছনে ব্যথা
  • গ্রন্থি ফুলে যাওয়া
  • ফুসকুড়ি
    ডেঙ্গুর লক্ষণ
    ডেঙ্গুর লক্ষণ

    তবে একটি কথা মাথায় রাখতে হবে যে, আপনি একটি ধরন দিয়ে আক্রান্ত হয়ে ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে ওঠার পর, ভবিষ্যতে আবার অন্য তিন ধরনের যেকোনটি দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। যদি আপনি দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন তবে আপনার মারাত্মক ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকি বেড়ে যাবে।

যদি ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো খারাপের দিকে চলে যায় এবং জীবনের জন্য-হুমকিসরূপ হয় তাহলে  তাকে মারাত্মক ডেঙ্গু  বলে। মারাত্মক ডেঙ্গু হলে রক্তনালীগুলি ক্ষতিগ্রস্ত এবং ফুটো হয়ে যায়। রক্তে ​​ জমাট বাঁধার কোষের (প্লেটলেট) সংখ্যা কমে যায়। এটি শক, অভ্যন্তরীণ রক্তপাত, অঙ্গের ব্যর্থতা এবং এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। মারাত্মক ডেঙ্গুর লক্ষন দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার  ব্যবস্থা করতে হবে।

মারাত্বক ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলো হলো-

  • তীব্র পেট ব্যথা
  • ক্রমাগত বমি
  • মাড়ি বা নাক থেকে রক্তপাত
  • প্রস্রাব, মল বা বমিতে রক্তের উপস্থিতি
  • ত্বকের নীচে রক্তপাত, যা দেখতে ক্ষত মনে হতে পারে
  • দ্রুত শ্বাস নেওয়া
  • ক্লান্তি
  • বিরক্তি বা অস্থিরতা

 ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ঃ
চিকিৎসকরা রক্ত ​​পরীক্ষা করে ডেঙ্গু সংক্রমণ নির্ণয় করতে পারেন। রক্ত পরীক্ষার মধ্যে ভাইরাস বা এন্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। যদি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে ভ্রমণের পর অসুস্থ হয়ে পড়েন, তাহলে তা চিকিৎসককে বলুন। এটি চিকিৎসককে নিশ্চিত করবে যে, আপনার ঘটা লক্ষন গুলো ডেঙ্গু সংক্রমণের সাথে সংশ্লিষ্ট কিনা।

ডেঙ্গু এবং চিকুগুনিয়ার মধ্যে পার্থক্যঃ

বৈশিষ্ট্য ডেঙ্গু চিকুনগুনিয়া
১। ভাইরাসের প্রজাতি ডেঙ্গু ভাইরাস, ফ্লাভিভাইরিডিয়া পরিবার এবং ফ্লাভিভাইরাস বংশের অন্তর্গত চিকুনগুনিয়া ভাইরাস, টোগাভিরিডিয়া পরিবার এবং আলফা ভাইরাস বংশের অন্তর্গত
২। প্রাথমিক ভেক্টর এডিস ইজিপ্ট এডিস অ্যালবোপিক্টাস
৩। ইনকিউবেশন ৪-৭ দিন ৩-৭ দিন (পরিসর ১-১২ দিন)
৪। রোগের সময়কাল ৪-৭ সপ্তাহ ১-২ সপ্তাহ
৫। কমন লক্ষণ জ্বর, মাথাব্যথা জ্বর,মাথাব্যথা
৬। জয়েন্ট এবং মাংশপেশিতে ব্যথা
  • পিঠে ব্যথা
  • বাহু এবং পায়ের পেশি ব্যথা
  • হাঁটু এবং কাঁধের জয়েন্টে ব্যথা
  • হাতে-পায়ের সকল জয়েন্টে ব্যথা করে, এমনকি ব্যথায় জয়েন্ট ফুলে যায়।
  • সকালের দিকে ব্যথা বেশি হয়।
৭। ফুসকুড়ি সাধারণত মুখে এবং হাত-পায়ে ফুসকুড়ি হয়। ধর, হাত-পা, মুখ, তালুতে ফুসকুড়ি হয় ।

 

৮। বাত অনুপস্থিত উপস্থিত
৯। রক্তক্ষরণ উপস্থিত উপস্থিত বা অনুপস্থিত উভয় হতে পারে
১০। শক রোগীর শক হতে পারে সাধারণত শক হয় না
১১। জটিলতা প্রাণঘাতী জটিলতা যেমন- শক, শ্বাসকষ্ট এবং রক্তপাত হতে পারে। ১০% পর্যন্ত রোগীদের দীর্ঘস্থায়ী জয়েন্টে ব্যথা হয়, কিছু রোগীর ক্ষেত্রে স্নায়ুবিক জটিলতা দেখা দেয়।

 

ডেঙ্গু প্রাথমিক চিকিৎসা

ডেঙ্গুর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। চিকিৎসকরা সধারণত লক্ষণ গুলোর চিকিৎসা করে থাকেন। রোগীরা বাড়িতে অবস্থান করেও চিকিৎসা নিতে পারেন।

মৃদ্যু উপসর্গের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত বিষয় মেনে চলতে হবেঃ

  • পরিমিত বিশ্রাম গ্রহন করুন।
  • ব্যথা এবং জ্বর দূর করতে প্যারাসিটামল নিন। অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন গ্রহণ করবেন না, কারণ এগুলি ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তপাতের সৃষ্টি করতে পারে।
  • ডিহাইড্রেশন রোধ করতে প্রচুর পরিমাণে তরলজাতীয় দ্রব্য পান করুন – যদি আপনি এমন এলাকায় থাকেন যেখানকার পানি অনিরাপদ তাহলে পানি ফুটিয়ে, ফিল্টার করে বা পানি বিশুদ্ধকরন ট্যবলেট ব্যবহার করে পান উপযোগী করুন।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন গ্রহণ করুন।

কয়েক সপ্তাহ পরে রোগী ভাল বোধ করতে শুরু করবে, যদি রোগীর অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

পরামর্শঃ

মশার প্রজনন প্রতিরোধঃ

  • মশা ডিম পাড়ার আবাসস্থলে নষ্ট করে দেওয়া।
  • বর্জ্য সঠিকভাবে ফেলতে হবে।
  •  মশার জন্য মানবসৃষ্ট আবাসস্থল অপসারণ করতে হবে যেমনঃ ঝোপ জঞ্জাল, ফুলের টবে জমে থাকা পানি, বদ্ধ ড্রেন, টায়ারে জমে থাকা পানি, ছোট ছোট বদ্ধ ও অব্যবহৃত ঢোবা নালা ইত্যাদি।
  • ঘর এবং ঘরের বাহিরে পানি সঞ্চয়কারী পাত্রে উপযুক্ত কীটনাশক প্রয়োগ।

ব্যক্তিগত সুরক্ষা:

  • ব্যক্তিগত পারিবারিক সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহন করা, যেমনঃ ধোয়াযুক্ত বা ধোয়াবিহীন কয়েল ,বিদ্যুৎ চালিত মশার কয়েল, মশা দূরকরন ক্রীম ইত্যাদি ব্যবহার করা ।এই ব্যবস্থাগুলি দিনের বেলা বাড়ির ভিতরে এবং বাইরে (যেমন: কর্মস্থল/স্কুলে) পালন করতে হবে কারণ ডেঙ্গু মশার বাহক দিনের বেলা কামড়ায়।
  • দিনের বেলায় ঘুমালে মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমানো।
  • মশা ত্বকের সংস্পর্শ কম করে এমন পোশাক পরা যেমন ফুল হাতা জামা, ফুল প্যান্টস ইত্যাদি।

    ডেঙ্গু সচেতনতা
    ডেঙ্গু সচেতনতা

সামাজিক সচেতনতা :

  • মশাবাহিত রোগের ঝুঁকি সম্পর্কে সমজের সকলকে অবহিত করা।
  • সমজের সকলকে একযোগে কাজ করতে উৎসাহিত করা। কারন সমজের সকলে নিজ নিজ বাড়ির আঙ্গিনা পরিষ্কার না করলে মশার উৎস নির্মূল করা সম্ভব নয়।

সরকারের হস্থক্ষেপঃ

  • মশা দমনে সরকারকে সরাসরি হস্থক্ষেপ করতে হবে। বদ্ধ ড্রেন, নালা, ঢোবা ইত্যাদি পরিষ্কার করার ব্যবস্থা নিতে হবে।
  • মশা জন্মাতে পারে এমন জায়গা গুলোতে কীটনাশক প্রয়োগ করতে হবে।
  • মশা নিদনের জন্য সকল ব্যবস্থা নিতে হবে। বিভিন্নভাবে জন-সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক সহযোগী গোষ্ঠীদের থেকে সাহায্য নিতে হবে।

বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন সরঞ্জাম এবং উদ্ভাবনী কৌশলের সন্ধানে গবেষণা চলমান করছেন যা, ডেঙ্গুর সংক্রমণকে বাধাগ্রস্ত করার বৈশ্বিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি অন্যান্য মশাবাহিত রোগের ক্ষেত্রেও অবদান রাখবে বলে আমরা আশাবাদি।


References

  1. CDC.Govt. Centers for Disease Control and Preventon. [Online] 2020. [Cited: Novembar 23, 2020.] https://www.cdc.gov.
  2. NHS. NHS.UK. [Online] 2019. [Cited: Auguest 08, 2019.] https://www.nhs.uk.
  3. WHO. World Health Organization. [Online] 2021. [Cited: May 19, 2021.] https://www.who.int.
  4. Dunkin, Mary Anne. WebMD. [Online] 2021. [Cited: June 12, 2021.] https://www.webmd.com.

 

 

 

 

 

 

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here