মাঙ্কিপক্স (Monkeypox)

2
764
মাঙ্কিপক্স
মাঙ্কিপক্স

 

করোনা ভাইরাসের রেশ কাটতে না কাটতে বিশ্ববাসির কাছে আরেক আতঙ্কের নাম মাঙ্কিপক্স। এই মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাস জনিত রোগ। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস সাধারণত প্রাণীদের দেহে থাকে, বিশেষ করে বানরের দেহে। তাই এই ভাইরাসকে মাঙ্কিপক্স বলা হয় কারণ বানরের ইংরেজি “মাঙ্কি”।  ১৯৫৮ সালের দিকে বানরের শরীরে সর্বপ্রথম এই মাঙ্কিপক্স সনাক্ত করা হয়। তবে ১৯৭০ সালের দিকে সর্বপ্রথম মানুষের শরীরে এই মাঙ্কিপক্স সনাক্ত করা হয়। তখন আফ্রিকার ১১টি দেশে এই মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে।
গুটিবসন্ত (স্মলপক্স), জলবসন্ত (চিকেনপক্স) সৃষ্টি করে যে ভাইরাস, সে একই পরিবারের সদস্য এই মাঙ্কিপক্স। এটি একটি আবরণযুক্ত ডাবল স্ট্যান্ডেড DNA ভাইরাস। এই ভাইরাসের দুইটা ভ্যারিয়েন্ট আছে একটি মধ্য আফ্রিকান ক্লেড অন্যটি পশ্চিম আফ্রিকান ক্লেড। এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের লক্ষণ গুলো দেখতে গুটিবসন্ত (স্মলপক্স) বা জলবসন্ত (চিকেনপক্স) এর মতন হলেও তীব্রতা অনেক কম। তাই বিজ্ঞানিরা এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যদিও বর্তমানে এই ভাইরাস বৃটেনসহ ইউরোপের অনেক দেশে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রিলিয়া এবং ইসরাইলে ছড়িয়ে পড়েছে। তারপরেও আতঙ্কিত না হয়ে এই মাঙ্কিপক্স সম্পর্কে একটা পরিষ্কার ধারণা নিয়ে সচেতন থাকুন।
কিভাবে ছড়ায়ঃ
সধারণত মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটা দুইভাবে সুস্থ মানুষের দেহে ছড়িয়ে থাকে, ১। আক্রান্ত প্রাণী থেকে, ২। আক্রান্ত মানুষ থেকে।
আক্রান্ত বানর, কাঠবিড়ালি, ইঁদুর ইত্যাদি প্রাণী থেকে মানুষের দেহে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটা ছড়িয়ে থাকে।  অন্যদিকে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে যদি কেউ যান, তাহলে তার মাঙ্কিপক্সে  আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ত্বকে যদি কোনো ক্ষত থাকে তাহলে সে ক্ষতস্থান দিয়ে এই ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। মানুষের শ্বাসনালী, চোখ, নাক বা মুখ দিয়েও প্রবেশ করতে পারে এই ভাইরাস। যৌনতার মাধ্যমে এই রোগ ছড়াতে পারে না বলে এর আগে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, শারীরিক সম্পর্কের সময় সরাসরি সংক্রমণ ঘটতে পারে।
কতটা বিপদজ্জনক:
এই মাঙ্কিপক্স ভাইরাসে আক্রান্তের বেশির ভাগ রোগীর হালকা উপসর্গ দেখা যায়। কখনো কখনো তা জলবসন্তের মতো হয়ে থাকে। দু’এক সপ্তাহের মধ্যে নিজের থেকেই তা সেরে যায়। তবে সচেতন না হলে কোনো কোনো সময় মাঙ্কিপক্স হতে পারে অনেক  ভয়াবহ। পশ্চিম আফ্রিকায় এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে এমন রেকর্ড রয়েছে।
লক্ষণ ও উপসর্গঃ
সাধারণত মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে উপসর্গ দেখা দেওয়ার সময়কাল হয় ৬-১৩ দিন তবে কখনো কখনো তা ৫-২১ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। সাধারণত –

  • জ্বর
  • তীব্র মাথা ব্যথা
  • লিম্ফ্যাডেনোপ্যাথি (লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া)
  • পিঠে ব্যথা
  • মায়ালজিয়া (মাংশপেশিতে ব্যথা)
  • তীব্র অ্যাথেনিয়া (শক্তির অভাব) দেখা দিয়ে থাকে। যা প্রথমিকভাবে অন্যান্য বসন্ত রোগের মতন।
মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ ও উপসর্গ
মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ ও উপসর্গ

অন্যদিকে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা যায় জ্বর হওয়ার ১-৩ দিনের মধ্যে। এই ফুসকুড়ি পেট ও পিঠের তুলনায় মুখ এবং হাত ও পায়ে বেশি দেখা যায়। ফুসকুড়ি সাধারণত ৯৫% রোগীদের ক্ষেত্রে মুখে এবং হাত ও পায়ের তালুতে ৭৫% রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। এছাড়া মুখের ভিতরে ৭০% রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায়।
পূর্বে মাঙ্কিপক্সের কারনে মৃত্যু হার ছিল ০-১১% কিন্তু বর্তমানে এর অনুপাত প্রায় ৩-৬%।
ডায়াগনোসিসঃ
ক্লিনিক্যালি মাঙ্কিপক্স ডায়াগ্নোসিস করতে হলে অন্যান্য ফুসকুড়ি ও র‍্যাশ জনিত রোগকে অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে যেমন- চিকেনপক্স, হাম, ব্যাকটেরিয়া জনিত ত্বকের সংক্রমন, স্ক্যাবিস, সিফিলিস নাকি ঔষধ সম্পর্কিত অ্যালার্জি।
এরপর চিকিত্সক যদি রোগীর মাঙ্কিপক্স হয়েছে বলে ধারণা করে থাকেন তাহলে নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিত্সক বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করবেন। তারপর নিশ্চিত হয়ে রোগী এবং রোগীর পরিবারকে রোগ সম্পর্কে বুঝিয়ে বলবেন।
চিকিৎসাঃ
মাঙ্কিপক্সের উল্লেখযোগ্য কোনো চিকিৎসা নেই। তবে রোগীর পর্যাপ্ত যত্নের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ গুলো, এর দ্বারা সৃষ্ট জটিলতা গুলো এবং দীর্ঘ মেয়াদি নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনা সম্ভব। এরজন্য রোগীকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম, খাবার, পানি এবং পুষ্টি গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তিতে রোগী  যেন, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এছাড়া এ্যান্টিভাইরাল এজেন্ট হিসাবে tecovirimat ব্যবহার করা যেতে পারে। এই এজেন্ট পূর্বে স্মলপক্স বা গুটিবসন্তের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিলো। এটি European Medicines Agency (EMA) থেকে লাইসান্সও পেয়েছিলো। তবে এই এজেন্ট সচারচর সব জায়গায় পাওয়া যায় না।
প্রতিরোধঃ
মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে টিকা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।  গুটিবসন্তের টিকা এক্ষেত্রে শতকরা ৮৫% কার্যকর বলে প্রমাণ পাওযা গেছে। এই টিকা শতকরা ৮৫% মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধ করে থাকে। এছাড়া বিজ্ঞানিদের মতে, আক্রান্ত ব্যক্তিকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা  আসবেন সকলকে ৩ সপ্তাহের মতন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এবং সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে মাঙ্কিপক্স মোকাবেলা করা সম্ভব। সুতরাং সচেতনতা এবং প্রতিরোধের মাধ্যমে মাঙ্কিপক্সের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

মাঙ্কিপক্সের ভ্যাক্সিন
মাঙ্কিপক্সের ভ্যাক্সিন

তথ্য সূত্রঃ World Health Organization (WHO)

 

2 COMMENTS

  1. Good post. I learn something new on sites I stumble upon everyday. Its always interesting to read articles from other authors and practice something from other sites.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here