Botulism বটুলিজম

0
826

বিজ্ঞাণে বটুলিনাম বিষ সবচেয়ে শক্তিশালী বায়োলজিক বিষ হিসাবে পরিচিত। ক্লজট্রিডিয়াম বটুলিয়াম (Clostridium botulium) দ্বারা উৎপাদিত এই বিষের কারনে বটুলিজম হয়ে থাকে। বটুলিজম হচ্ছে খুবই বিরল কিন্তু খুবই মারাত্বক অসুস্থতা যা খাদ্যের মাধ্যমে অথবা ক্ষত থেকে হয়ে থাকে।

খাদ্যের মধ্যে সে সকল খাদ্য যে সকল খাদ্য, কৌটা জাতীয় এবং সরাসরি মাটির সাথে সম্পর্কযুক্ত সে সকল খাদ্য থেকে এটি হয়ে থাকে। বটুলিজমের কারনে প্যারালাইসিস, শ্বাস কষ্ট জনিত সমস্যা সহ অনেক সমস্যা দেখা যায়,সঠিক চিকিৎসা না করালে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

বটুলিজম রোগ বৃত্তান্ত তথ্যঃ

  • পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ১০০০জনের ফুড বর্ন বটুলিজম রেকর্ড করা হয়ে থাকে
  • প্রতি বছর দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলীয় দেশ গুলোতে প্রায় ৪০জন উন্ড বটুলিজম রেকর্ড হয়ে থাকে,যারা কিনা হিরোইন নেওয়ার সময় বটুলিনাম জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে
  • Centers for Disease Control and Prevention (CDC)Trusted Source, অনুযায়ী প্রতি বছর আমেরিকাতে ১৪৫ জন বটুলিজমে অক্রান্ত হয়ে থাকে তাদের মধ্যে ৩-৫% লোক এই বটুলিনাম বিষক্রিয়ায় মারা যান।
  • আমেরিকাতে প্রতি বছর ৭০ জনের মতন ইনফ্যান্ট বটুলিজম হয়ে থাকে

বটুলিজম এর ধরণ বা প্রকারভেদঃ

কয়েক ধরনের বটুলিজম হয়ে থাকে

  • খাদ্য বাহিত বটুলিজম (Foodborne botulism)
  • ইনফ্যান্ট বটুলিজম (Infant botulism)
  • উন্ড বা ক্ষত বটুলিজম (Wound botulism)
  • ইনহেলেশন বটুলিজম (Inhalation botulism)
  • এ্যাডাল্ট ইনটেস্টাইনাল টক্সিমিয়া (Adult intestinal toxemia)
  • এ্যাট্রোজেনিক বটুলিজম (Iatrogenic botulism)

বটুলিজম এর কারণঃ

প্রধাণত ৩ ধরনের বটুলিজমের কারণ হল-

খাদ্য বাহিত বটুলিজম (Foodborne botulism): এটি হয়ে থাকে যখন কোনো কৌটা জাতীয় খাবার খাওয়ার সময় বটুলিনামবিষ শরীরে ঢুকে যায় তখন।

ইনফ্যান্ট বটুলিজম (Infant botulism): অনেক ক্ষেত্রে খেলার সময় ছোট বাচ্চারা দূষিত মাটি বা খাবার চিবিয়ে থাকে তখন যদি বটুলিনাম বিষ শরীরে প্রবেশ করে তাহলে ইনফ্যান্ট বটুলিজম হয়ে থাকে।

উন্ড বা ক্ষত বটুলিজম (Wound botulism): ক্লজট্রিডিয়াম বটুলিয়াম (Clostridium botulium) সহ ক্ষতস্থান ইনফেক্টেড হলে তাকে উন্ড বা ক্ষত বটুলিজম বলে। এটি সাধারণত ইঞ্জেকশন দিয়ে অবৈধ ড্রাগ যেমন- হিরোইন নেওয়ার সময় হয়ে থাকে।

বটুলিজম এর লক্ষণঃ

বিভিন্ন ধরণের বটুলিজমের লক্ষণ বিভিন্ন রকম তবে শুরু দিকে একটু অসুস্থতা বোধ, বমি, পাকস্থলি ক্র্যাম্প, ডায়রিয়া অথবা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতন সমস্যা দেখা দিবে। সঠিক চিকিৎসা না পেলে পরবর্তী কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যে রোগীর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাবে।

  • ডাবল দৃষ্টি
  • ঝাপসা দৃষ্টি
  • চোখের পাতা ঝুলে যাবে
  • গিলতে অসুবিধা হবে
  • কথা বলাতে সমস্যা হবে
  • শ্বাস নিতে সমস্যা হবে
  • জহ্বা ভারি ভারি মনে হবে
  • শুষ্ক মুখ
  • মাংশ পেশির দূর্বলতা
  • প্যারালাইসিস (মাথা থেকে শুরু করে পা পর্যন্ত)

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে

  • দেখতে দূর্বল মনে হবে
  • খাবার খেতে না চাওয়ার প্রবণতা দেখা যাবে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিবে
  • মাংশপেশির শীথিলতা দেখা যাবে (ফ্লপি)

বটুলিজম এর ডায়াগনোসিসঃ

উপরের লক্ষণ গুলো দেখা দিলে বা বটুলিজম হয়েছে বলে মনে হলে সাথে সাথে একজন রেজিস্ট্রাড চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসক রোগীর বৃত্তান্ত শুনবেন এবং শারীরিক পরীক্ষা করবেন। তিনি রোগীকে কিছু প্রশ্ন করবেন,যেমন-

  • অসুস্থতা অনুভব করার আগে রোগী কোন জাতীয় খাবার গ্রহণ করেছেন?
  • রোগী কোনো ড্রাগ নেয় কিনা?
  • রোগীর শরীরের কোনো ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে কিনা?
  • বাচ্চা কোনো দূষিত মাটই বা খাবার খেয়ে ফেলেছে কিনা? ইত্যাদি

এছাড়াও চিকিৎসক রোগীর রক্ত পরীক্ষা, পায়খানা পরীক্ষা করে রোগটি ডায়াগনোসিস করার চেষ্টা করবেন।

কিন্তু যেহেতু এই রোগটি বিরল এবং এর লক্ষণ গুলো অন্য অনেক রোগের লক্ষণের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ তাই অনেক ক্ষেত্রে মিসডায়াগনোসিস হয়ে থাকে।

যেন মিসডায়াগনোসিস না হয় সেজন্য চিকিৎসক আরো কিছু টেস্ট দিয়ে থাকবেন, যেমন-

  • Electromyography (EMG):মাংশ পেশির প্রতিক্রিয়া বুঝার জন্য
  • Imaging scans:মাথার ভিতরে কোনো ডেমেজ হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য
  • CSF:ব্রেইনে কোনো ইনফেকশন আছে কিনা তা বুঝার জন্য এবং চিকিৎসক সঠিক ডায়াগনোসিস করবনে।

বটুলিজম এর চিকিৎসাঃ

বটুলিজম রোগীদের যত দ্রুত সম্ভব একজন নিউরোলজিস্ট চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা দেওয়া শুরু করে দিতে হবে। তবে চিকিৎসার লক্ষ্যমাত্রা হিসাবে (১) শ্বাস প্রশ্বাসে সাহায্য করা (২) এন্টিটক্সিন ব্যবহার করে প্যারালাইসিসের অগ্রগতি কমানো (৩) অন্যান্য সমস্যার প্রতিরোধ করা।

দূর্বলতা এবং শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা একজন রোগীকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে এতটা শংকটাপন্ন করে ফেলে যে, রোগীকে ICU তে রাখতে হয় এবং শ্বাস প্রশ্বাসে জন্য ভেন্টিলেটরের সাহায্যও নিতে হতে পারে। ICU তে এইসব রোগীদেরকে একদল চিকিৎসকের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।

বটুলিজম ডায়াগনোসিস হওয়ার সাথে সাথে  এন্টিটক্সিন দেওয়া শুরু করে দিতে হবে।কিন্তু উন্ড বটুলিজম না হলে এন্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই।বাচ্চাদের ক্ষেত্রে Human Botulinum Immune Globulin-IV(BIG) ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়ে থাকে।

শ্বাস কষ্টের সমস্যা, প্যারালাইসিস, মাংশপেশির দূর্বলতা সহ অন্যান্য সমস্যার জন্য একজন গ্র্যাজুয়েট ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীকে চিকিৎসা দিবেন।

এছাড়াও এসব জটিলতার জন্য নার্সিং কেয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

বটুলিজম এর পরামর্শঃ

রোগী একজন নিইরোলজিস্টের অধীনে চিকিৎসা নিবেন। রোগীর অবস্থা শংকটাপন্ন হলে ৯৯৯ এ কল করে রোগীকে হাসপাতালে প্রেরণ করতে হবে এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ফিজিওথেরাপি সহ  প্রয়োজনীয় সকল চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।

References

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here